সরাইল উপজেলা

সরাইল উপজেলা আয়তন: ২২৭.২২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°০০´ থেকে ২৪°১১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫৯´ থেকে ৯১°১৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে নাসিরনগর উপজেলা, দক্ষিণে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সদর উপজেলা, পূর্বে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সদর ও নাসিরনগর উপজেলা, পশ্চিমে ভৈরব ও বাজিতপুর উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৭১১০১; পুরুষ ১৩৬২৪০, মহিলা ১৩৪৮৬১। মুসলিম ২৪৭০৩১, হিন্দু ২৩৯৮৮, বৌদ্ধ ১৬ এবং অন্যান্য ৬৬।

সরাইল উপজেলা | ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা | চট্টগ্রাম বিভাগ | বাংলাদেশ

জলাশয় মেঘনা, তিতাস, বগদিয়া ও ভৈরব নদী এবং আকাশী বিল ও শাপলা বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন সরাইল উপজেলা গঠিত হয় ১৯৯০ সালে।

তথ্যঃ

সরাইল উপজেলা | ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা | চট্টগ্রাম বিভাগ | বাংলাদেশ

সরাইল উপজেলা আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১,

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ হাটখোলা জামে মসজিদ (সপ্তদশ শতাব্দী), সরাইল শাহী জামে মসজিদ (মুগল আমল), আরিফাইলের সাগরদীঘি মসজিদ (ষোড়শ শতাব্দী), জোড়া কবর (জাতীয় জাদুঘরের তত্ত্বাবধানে), বারিউরার হাতিরপুল জামে মসজিদ (মুগল আমল), হাবলিপাড়ার ইদারা (মুগল আমল)।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি মুক্তিযুদ্ধের সময় উপজেলার বিটঘর এলাকায় পাকবাহিনী প্রায় ৭০ জন লোককে হত্যা করে। ১৯৭১ সালের ৫ মে মুক্তিযোদ্ধারা শাহবাজপুর পাকসেনা ক্যাম্প আক্রমণ করলে ৯ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং এতে একজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। তাছাড়া কালীকচ্ছ বাজারের উত্তরে মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা দলের মাইন বিস্ফোরণে দুটি গাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে পাকবাহিনীর কয়েকজন অফিসার ও সরাইলের শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান নিহত হন।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ৩; স্মৃতিস্তম্ভ ৪ (বিটঘর গ্রাম, সরাইল অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গন, সরাইল ডিগ্রি কলেজ মাঠ, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শেখ মেজবাহউদ্দিন স্মৃতিস্তম্ভ); স্মৃতিসৌধ ৪ (অাঁখিতারা, নোয়াগাঁও, কালীকচ্ছ-বারিউড়া সড়ক, শাহবাজপুর ইউপি অফিস সংলগ্ন)।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ২৭৩, মন্দির ২৪, মাযার ৭, তীর্থস্থান ৩। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: সরাইল হাটখোলা জামে মসজিদ, আরিফাইলের সাগরদীঘি মসজিদ, আনন্দময়ী কালীমন্দির, মলাইশ গোপাল জিউর মন্দির, কালীকচ্ছ বাসুদেব মন্দির, কৃষ্ণ মন্দির, কুতুব শাহ মাযার, কালা শাহ মাযার, আয়েত আলী শাহ মাযার, শাহ রোকন উদ্দীন আনসারীর (র:) মাযার (শাহজাদাপুর), শেখ নাজিরের দরগাহ (সূর্যকান্দি), নিমবৈরাগীর মঠ, স্বামী আনন্দচন্দ্রের দয়াময় আশ্রম।

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩২.৯%; পুরুষ ৩৬.২%, মহিলা ২৯.৭%। কলেজ ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৫, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২৩, কিন্ডার গার্টেন ৭, মাদ্রাসা ১২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সরাইল ডিগ্রি মহাবিদ্যালয় (১৯৭০), সরাইল অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৪), শাহবাজপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৭), চুন্টা এসি একাডেমি (১৯৪১)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী বর্তমান: সরাইল যুগে যুগে, পরগনা, সরাইল বার্তা, মুক্তপ্রবাহ, অনুপম বার্তা, শ্বাশত সরাইল (ত্রৈমাসিক); অবলুপ্ত: পল­ী প্রদীপ, রায়ত বন্ধু, চুন্টা প্রকাশ (১৯২২); পাক্ষিক: বেলাশেষে (১৯৯৩)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৬, ক্লাব ২০, মহিলা সংগঠন ৩৪, সিনেমা হল ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬০.৬৭%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৭৭%, শিল্প ১.১১%, ব্যবসা ১৩.৬৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.০৫%, চাকরি ৫.৫%, নির্মাণ ০.৮৩%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ২.৩৪% এবং অন্যান্য ৯.৭%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৯.৭২%, ভূমিহীন ৪০.২৮%। শহরে ৩৮.৫৫% এবং গ্রামে ৬৩.৯৮% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, পাট, সরিষা, ডাল, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  তিল, তিসি, কাউন, ভুট্টা, অড়হর।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, নারিকেল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৯, গবাদিপশু  ৬২, হাঁস-মুরগি ৬০, হ্যাচারি ২, কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র ১।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৭৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৩ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৮৯ কিমি; নৌপথ ১৪ নটিক্যাল মাইল।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ময়দাকল, বরফকল, ইটভাটা, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, সূচিশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৭, মেলা ৪। সরাইল বিকাল পাকশিমুল বাজার, তাডিউড়া বাজার, কালীকচ্ছ বাজার, গরুর হাট (সরাইল) এবং বাঘাচাঁন মিয়ার মেলা, শাহবাজপুর মেলা ও গাজীকালুর বারুণী মেলা (সরাইল) উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, গম, পাট, চামড়া, ময়দা, সরিষা।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পলি­বিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৪.৮৩% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৩.৮৬%, পুকুর ০.৫৮%, ট্যাপ ০.৭৯% এবং অন্যান্য ৪.৭৭%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৬.৬২% (গ্রামে ২৯.৩৭% ও শহরে ৭২.৬৯%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫৫.২৬% (গ্রামে ৬২.৬৫% ও শহরে ১৮.৫১%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৮.১২% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে­ক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৪, ক্লিনিক ৫, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১০, পশু চিকিৎসালয় ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৮৯৭ সালের ১২ জুন প্রচন্ড ভূমিকম্পে এবং ১৯৮৩ সালে ও ২০০৪ সালের ২৮ এপ্রিল ঘূর্ণিঝড়ে এ অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ ও ১৯৫৪ সালের মন্বন্তর এবং ১৯৭৪, ১৯৮৮, ১৯৯৮ ও ২০০৪ সালের বন্যায় উপজেলার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

সরাইল উপজেলা | ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা | চট্টগ্রাম বিভাগ | বাংলাদেশ

Leave a Comment