বাঞ্ছারামপুর উপজেলা আয়তন: ২১৭.৩৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৪১´ থেকে ২৩°৫৩´ উত্তর অক্ষাংশ থেকে ৯০°৪৪´ থেকে ৯০°৫৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে নরসিংদী সদর উপজেলা, দক্ষিণে হোমনা উপজেলা, পূর্বে নবীনগর ও মুরাদনগর উপজেলা, পশ্চিমে নরসিংদী সদর ও আড়াইহাজার উপজেলা।
জনসংখ্যা ২৭৮২৪০; পুরুষ ১৩৮৪২১, মহিলা ১৩৯৮১৯। মুসলিম ২৬৩৪৯০, হিন্দু ১৪৭৩৮ এবং অন্যান্য ১২।
জলাশয় প্রধান নদী: মেঘনা, তিতাস; চন্দন বিল ও বামন্ধার বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন বাঞ্ছারামপুর থানা গঠিত হয় ১৯০৪ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
তথ্যঃ
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১,
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ খোশকান্দি জামে মসজিদ, বাঞ্ছারামপুর সদর জামে মসজিদ, ধারিয়ারচর জামে মসজিদ, উজান চর কালীমন্দির, রূপসদী দক্ষিণবাজার কালীমন্দির।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে উপজেলার মিরপুরে ১০ সেপ্টেম্বর, আসাদনগরে ১৫ ও ১৮ সেপ্টেম্বর, ঝগড়ার চরে ২৭ নভেম্বর, দুর্গারামপুরে ১২ ডিসেম্বর এবং দশদোনা গ্রামে ১৩ ডিসেম্বর পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তাছাড়া ৫ আগষ্ট উজানচর কৃষ্ণনগর গ্রামে গণহত্যা সংঘটিত হয়। এ উপজেলায় বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৫ জন। ৮ ডিসেম্বর এ উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৫৩২, মন্দির ৪, মাযার ২, এতিমখানা ৩। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: খোশকান্দি জামে মসজিদ, বাঞ্ছারামপুর সদর জামে মসজিদ, ধারিয়ারচর জামে মসজিদ, উজান চর কালীমন্দির, রূপসদী দক্ষিণবাজার কালীমন্দির, হযরত রাহাত আলী শাহ্ (রহ:) মাযার (সাইফুল্লা কান্দি) ও কান্দুশাহের মাযার।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৫%; পুরুষ ৩৮.৪%, মহিলা ৩১.৭%। কলেজ ৫, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৯, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১৯, মাদ্রাসা ৭। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বাঞ্ছারামপুর ডিগ্রি মহাবিদ্যালয় (১৯৭৩), শাহরাহাত আলী কলেজ (১৯৯৫), রূপসদী বৃন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয়, উজানচর কে এন উচ্চ বিদ্যালয়, দরিয়াদৌলত আঃ গণি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৯), ধারিয়ারচর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৭), বাঞ্ছারামপুর এস এস পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৮), শাহরাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭৩), বাঞ্ছারামপুর বালিকা পাইল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭০), বাঞ্ছারামপুর টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ (১৯৮০), বাঞ্ছারামপুর আইডিয়াল টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (২০০৬), বাঞ্ছারামপুর সোবহানিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা (১৯৮১), রাধানগর কালিকাপুর রাহমানিয়া দাখিল মাদ্রাসা (১৯৯৩)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক তিতাস (অবলুপ্ত)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৫, ক্লাব ৮, সিনেমা হল ২, খেলার মাঠ ১২।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪৪.৪৪%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৩৩%, শিল্প ৬.০৮%, ব্যবসা ১৩.৫৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.২৮%, চাকরি ৬.৮১%, নির্মাণ ১.১৫%, ধর্মীয় সেবা ০.৩১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৫.৫৮% এবং অন্যান্য ১৭.৪৯%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৯.৮৬%, ভূমিহীন ৪০.১৪%। শহরে ৪৮.১৮% এবং গ্রামে ৬০.৫৪% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, সরিষা, তিল, শাকসবজি, ডাল।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি আখ, কাউন, চীনা, তামাক।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, জাম, লিচু, পেঁপে।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৪৭.৮৭৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ১০৮.৬৫৮ কিমি; নৌপথ ৩৮ নটিক্যাল মাইল।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা ধানকল, আটাকল, বরফকল, কলম তৈরি কারখানা।
কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩২, মেলা ৫। বাঞ্ছারামপুর বাজার, রূপসদী বাজার, মরিচাকান্দি বাজার, উজান চর বাজার এবং রূপসদী মেলা, উজান চরের বৈশাখী মেলা ও দরিয়া দৌলত মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য গম, পাট, তিল, লুঙ্গি, গামছা, শাড়ি ও অন্যান্য সূতি কাপড়।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩০.২৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯১.৮৪%, পুকুর ০.৮৬%, ট্যাপ ০.৬৯% এবং অন্যান্য ৬.৬১%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৭.৬৮% (গ্রামে ৩৭.১৭% ও শহরে ৪৬.৪৪%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৬.৫১% (গ্রামে ৪৭.৬৩% ও শহরে ২৭.২৬%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৫.৮১% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, হাসপাতাল ১, পল্লি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ২, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৮, পশু চিকিৎসা কেন্দ্র ১, ক্লিনিক ৫।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৫৪, ১৯৮৮, ১৯৯৮ ও ২০০৪ সালের বন্যা এবং ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ ও বন্যা এবং ২৮ আগষ্ট ২০০৪ সালের প্লাবনে এই অঞ্চলের ঘরবাড়ি, মৎস্য, গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।